সাহসী দুইজন কিশোর বালকের কাহিনী ❍ এবং ( আবু জাহেলের মৃত্যু ও বদর যুদ্ধের গল্প )
❍❍❍❍ বদরের ময়দানের যুদ্ধঃ- ❍❍❍❍
🌴 একদিকে মুসলমান । আরেক দিকে কাফের । মুসলমানদের দলে আছেন স্বয়ং রাসূলে করীম (সাঃ) । আরো আছেন সাহাবীগণ । কাফেরদের দলে রয়েছে মক্কার বড় বড় কাফের সর্দার । বহুদিন পর্যন্ত যেসব কাফের মক্কায় মুসলমানদের কষ্ট দিয়েছে, নির্যাতন করেছে, রাসূল (সাঃ)-কে হত্যার চেষ্টা করেছে, তাঁদের অনেকেই এই যুদ্ধে এসেছে । বদর যুদ্ধ হলো কাফেরদের সাথে মুসলমানদের প্রথম প্রকাশ্যে “জিহাদ” ❍ ❍
🌴 তুমুল যুদ্ধ চলছে । চারিদিকে শত্রুকে খুঁজে চলেছে সবাই । কেউ কারো দিকে নজর দিতে পারছেনা । বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) এক জায়গায় দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করেছিলেন, শত্রুকে কিভাবে ঘায়েল করা যায় । হঠাৎ দেখলেন, তার দু’পাশে এসে দাঁড়ালো দুটি বালক । দু’জনই মুসলিম ।
🌴 আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) বালক দু’জনের দিকে তাকালেন । মনে মনে তিনি হতাশ । এরা তো নিতান্তই বালক ! এরা যুদ্ধ করবে কিভাবে ! ! ! তিনি ভাবছিলেন, যদি তার আশে-পাশে আরো শক্তসমর্থ মুসলমান থাকতেন, তাহলে কাফেরদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর সময় একজন আরেকজনকে সহযোগিতা করতে পারতেন; কিন্তু সেই কাজ কি এই বালক দু’জনকে দিয়ে সম্ভব ?
🌴 বালক দু’জন সম্পর্কে তিনি যখন এ ধরনের ভাবনা ভাবছিলেন, তখনই এক বালক এসে তার হাত জড়িয়ে ধরে বললঃ—চাচাজান ! ! ! আপনি আবু জাহেল কে চিনেন ?
🌴 আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) জবাবে বললেন—হ্যাঁ, চিনি । কিন্তু আবু জাহেলকে তোমার কী প্রয়োজন ?’
🌴 বালক বললো—“আমরা শুনেছি, আবু জাহেল আমাদের প্রিয় রাসূল (সাঃ)-কে গালা গালি করে । রাসূলের নামে আজে-বাজে কথাবার্তা বলে বেড়ায় । আল্লাহর কসম ! ! ! যদি আবু জাহেলকে দেখতে পাই, তবে তার জীবন খতম করার আগে আমি ক্ষ্যান্ত হবনা । যদি তাঁকে খতম করতে না পারি তবে নিজেই শহীদ হয়ে যাবো ।”
🌴 বালকের কথা শুনে আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) অবাক হয়ে গেলেন । অল্প বয়সী বালক ! ! ! অথচ কী অসামান্য সাহস ! ! !
🌴 এসময়ের অপর বালকটি তাঁকে জিজ্ঞাসা করল—আবু জাহেল কে, কোথায় পাওয়া যাবে, জানতে চাইলো । আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) তাঁকে প্রশ্ন করলেন—“আবু জাহেলকে তোমাদের কী প্রয়োজন ?”—তখন অপর বালকটিও আগের বালকের মতই জবাব দিল । আবু জাহেলকে যেখানেই পাওয়া যাবে, তাঁকে হত্যা করবই, এই প্রত্যয় ব্যক্ত করল ।
🌴 পাশে দাঁড়ানো দুই কিশোরের কথায় আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) তখন বিস্মিত হয়েচ্ছিলেন; অবাক হয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই দেখলেন, যুদ্ধের ময়দানে ঘোড়ায় চড়ে ছূটে বেড়াচ্ছে আবু জাহেল । কিশোর দু’জনকে দেখিয়ে দিলেন তিনি । বললেন-“তোমরা আমার কাছে যার পরিচয় জানতে চেয়েছ, এই দেখ সেই লোকটা যাচ্ছে ।”
🌴আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ)-এর মুখের কথা শেষ হতে না হতেই বালক দু’জন ছুটলো । তীরের মত ছুটতে ছুটতে গিয়ে আবু জাহেলের সামনে হাজির হলো দু’জনই ।
🌴 আবু জাহেল ঘোড়ায় চড়ে ছুটছিল । বালক দু’জনের পক্ষে ঘোড়ায় চড়ে থাকা আবু জাহেলের শরীরে সরাসরি আঘাত করা ছিল অসম্ভব । একজন আক্রমণ করল আবু জাহেলের ঘোড়ায় – আরেকজন আবু জাহেলের পায়ে খোলা তলোয়ার দিয়ে আঘাত করল ।
🌴 মুহূর্তের মধ্যেই কাফের সর্দার আবু জাহেল মাটিতে গড়িয়ে পড়ল । মাটিতে পড়েই ছটফট করতে লাগল আবু জাহেল । বালক দু’জন সমানতালে তাঁকে আঘাত করে চলল ।
🌴 আবু জাহেলের পাশে পাশে যুদ্ধ করছিল আবু জাহেলের ছেলে । হঠাৎ করে বাবার এই করুন দশা দেখে সে থমকে গিয়েছিল প্রথমে । এরপর আবু জাহেলের ছেলে দু’জনের একজনের উপর তরবারী চালিয়ে দিল । বালকের মাথা লক্ষ্য করে তরবারীর আঘাত করেছিল । কিন্তু সেই আঘাত এসে লাগল বালকের হাতে । হাতটি শরীর থেকে আলাদা হয়ে চামড়ায় ঝুলে রইল ।
🌴আবু জাহেলের ছেলে ভেবেছিল আক্রমণ করে সে বালকের হাত যখন কেটে ফেলতে পেরেছে, তখন আর বালক দু’জনকে ধরাশায়ী করা কোন ব্যাপার-ই নয় । কিন্তু তার এই ভাবনার মৃত্যু হলো সামান্য সময়েই ।
🌴 যেই বালকের হাত কেটে ঝুলে গেছে, যুদ্ধ করতে অসুবিধা হচ্ছে বলে সে পায়ের নিচে হাত রেখে একটানে নিজের হাতটা ছিঁড়ে ফেললো । তারপর ছিঁড়ে ফেলা হাত দূরে নিক্ষেপ করে আবারো যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো ।
🌴 এই অবাক করা কাণ্ড দেখে আবু জাহেলের ছেলে দ্রুত সেখান থেকে চটকে পড়ল ।
🌴 বালক দু’জন আবারো আবু জাহেলের শরীরের উপর চড়ে বসলো । এখনো আবু জাহেল মরেনি । দূরথেকে বালকদের অভাবনীয় আক্রমণে আবু জাহেলের এই মরণ দশা দেখে আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) এগিয়ে এলেন । এক কোপে আবু জাহেলের শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেললেন ।
🌴 রাসূল (সাঃ) এর ভয়ানক এক দুশমনকে খতম করল দুই কিশোর । সাহসী কিশোর দু’জনের মধ্যে একজনের নাম মা’আয । এর হাত কাটা গিয়েছিলো । অপর জনের নাম মুআ’ও ওয়ায ।
🌴 রাসূল (সাঃ)-এর কিশোর সাহাবী এরা । এদের সাহস ও বীরত্ব দেখে শেষ পর্যন্ত বদর প্রান্তরের সবাই অবাক হয়ে গেলো ।